Home Travel পৃথিবীর বিখ্যাত নদীর নাম

পৃথিবীর বিখ্যাত নদীর নাম

by admin
পৃথিবীর বিখ্যাত নদীর নাম

পৃথিবীর বিখ্যাত নদীর নাম: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছোট-বড় প্রায় ৯০০ নদ-নদী আছে এ দেশে। কোনো কোনোটার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম নদীগুলোর তুলনায় তা সামান্যই বলা যায়। যেমন পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ৩৪৫ কিলোমিটার, মেঘনা ১৫৬ কিলোমিটার। পৃথিবীতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার নদী রয়েছে ( তবে বাংলাদেশের মতো এগুলোকে নদ বা নদী হিসেবে আলাদা করা হয় না)। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নদী কোনগুলো, তা জানার চেষ্টা করব এ লেখায়।

পৃথিবীর বিখ্যাত নদীর নাম ও বৈশিষ্ট্য

এশিয়ার নদ-নদী

. ইয়াংসিকিয়াং নদী:    

ছাং চিয়াং নদী বা ইয়াংসিকিয়াং নদী  এশিয়া এবং চীনের দীর্ঘতম নদ। এর অপর নাম স্বর্ণভরপুর নদী । এ নদীর দৈর্ঘ্য ৬৩০০ কিমি ।  এর উৎপত্তি তিব্বতের মালভূমি এবং পতনস্থল পূর্ব চীন সাগরে । তবে একক দেশের মধ্যে প্রবাহিত দীর্ঘতম নদী এটি। এর ৭০০-এর বেশি উপনদী আছে।

. হোয়াংহো নদী:     

প্রাচীনকালে বন্যায় দুইধার প্লাবিত হতো বলে একে ‘চীনের দুঃখ’ বলা হত। অন্য নাম পীত নদী, হলুদ নদী।  দৈর্ঘ্য ৫৪৬৪ কি.মি । এর উৎপত্তি চীনের কুনলুন পর্বত এবং পতনস্থল পীত সাগরে ।

. সিন্ধু নদ:           

 দেশ: পাকিস্তান, ভারত, চীন এবং আফগানিস্তান। এর উৎপত্তি তিব্বতের মালভূমি এবং পতনস্থল আরব সাগরে । সিন্ধু নদের দৈর্ঘ্য ৩১৮০ কিমি ও ভারতবর্ষের দীর্ঘতম নদ। এই নদের নামানুসারে ভারতের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হয়েছে। এটি  পাকিস্তানের অর্থনীতির ভিত্তি।

 শতদ্রু (শতলজ), বিপাশা, ইরাবতী (রাভী), চন্দ্রভাগা, বিতস্তা (ঝিলাম) প্রভৃতি সিন্ধুর প্রধান উপনদী।

. গঙ্গা:

দেশ: নেপাল, ভারত এবং বাংলাদেশ। ভারতের প্রধান/ জাতীয় নদী।  ধর্মীয়ভাবে হিন্দুদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ নদ। এর উৎপত্তি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ এবং পতনস্থল বঙ্গোপসাগর ।  দৈর্ঘ্য: ২৫১০ কিমি।

শাখানদী: হুগলি ও ভাগীরথী।

. ব্রহ্মপুত্র:

দেশ: চীন, নেপাল, ভুটান, ভারত এবং বাংলাদেশ।  দৈর্ঘ্য ২৯৪৮ কিমি । এর উৎপত্তি তিব্বতের মানস সরোবর হৃদ এবং পতনস্থল বঙ্গোপসাগর।

. লেনা নদী:

দেশ: রাশিয়া। এটি সাইবেরিয়ায় অবস্থিত এবং বরফাবৃত। এর উৎপত্তি বৈকাল হৃদ এবং পতনস্থল উত্তর মহাসাগর।

. আমুর নদী:

 সাইবেরিয়ায় অবস্থিত । আমুর নদী মধ্য এশিয়ার দীর্ঘতম নদী । এর উৎপত্তি ইউব্লোনভি পর্বত এবং পতনস্থল ওখটস্ক সাগর ।

. টাইগ্রিস ইউফ্রেটিস নদী:

 দেশ: ইরাক, তুরস্ক এবং সিরিয়া। মিলীতভাবে শাত-ইল-আরব নামে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়। এ নদী দোজলা-ফোরাত নামেও পরিচিত। এর উৎপত্তি আর্মেনিয়ার উচ্চভূমি এবং পতনস্থল পারস্য উপসাগর ।

. জর্ডান নদী:

দেশ: জর্ডান ইসরাইল।  ইহুদি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পবিত্র নদী। এ নদীতে মাছ হয় না। এ নদীর প্রবাহ সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, ইসরায়েল এবং জর্ডানসহ ৫টি দেশের ভিতর দিয়ে যায়। ইসরায়েল এই নদীর পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে কৃত্রিমভাবে খাল কেটে দক্ষিণ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে মৃত সাগরের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। এর উৎপত্তি হুলা হৃদ এবং পতনস্থল মৃত সাগর ।

১০. ইরাবতী নদী:

 দেশ: মায়ানমার। এর উৎপত্তি ভারতের নাগা পার্বত্য অঞ্চল এবং পতনস্থল মার্তাবান উপসাগর ।

১১. সালুইন নদী:

এর উৎপত্তি তিব্বতের মালভূমি এবং পতনস্থল মার্তাবান উপসাগর ।

ইউরোপের নদনদী

১. ইয়েনিসেই নদী:

সাইবেরিয়ার ইয়েনিসেই নদীর দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৫৩৯ কিলোমিটার। নদীটি রাশিয়ার সায়ান পর্বতমালায় একটি গভীর গিরিখাত ও মঙ্গোলিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর্কটিক মহাসাগরে প্রবাহিত দীর্ঘতম নদী এটি। বিশ্বের গভীরতম নদীগুলোর মধ্য অন্যতম।

. ভলগা নদী:

 ইউরোপের দীর্ঘতম নদী। দেশ: রাশিয়া ও কাজাখস্তান। ভলগা নদীর দৈর্ঘ্য ৩,৬৯০ কিমি। এর উৎপত্তি রাশিয়ার ভলদাই পর্বত এবং পতনস্থল কাস্পিয়ান সাগর ।

. দানিয়ুব নদী:

 ইউরোপের ২য় দীর্ঘতম নদী। ইউরোপের অন্যতম প্রধান পরিবহন পথ। দানিয়ুব নদীর  দৈর্ঘ্য  ২৮৪২ কি.মি.। ১০ টি দেশের (মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ) উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে একে আন্তর্জাতিক নদী বলে। দেশ: রুমানিয়া, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, জার্মানি, স্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া। এর উৎপত্তি ব্ল‍্যাক ফরেস্ট এবং পতনস্থল কৃষ্ণসাগর ।

. ভিশ্চুলা এবং ওভারনীম নদী:

 এর উৎপত্তি ইউরোপের উচ্চ মালভূমি এবং পতনস্থল বাল্টিক সাগর ।

. এলব নদী:

এর উৎপত্তি এডা পর্বতশ্রেণী এবং পতনস্থল উত্তর সাগর ।

৬. বসনিয়া-হার্জেগোভিনাকে পৃথক করেছে – দ্রীনা নদী।

আল্পস এর পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে পো অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে, রোন ভূ-মধ্যসাগরে, রাইন উত্তর সাগরে পতিত হয়েছে।

● ডন, নিপার, নিস্টার প্রভৃতি কৃষ্ণ সাগরে পতিত হয়েছে।

● জেনেভা, লুসান, জুরিখ, ম্যাডোরে, গার্দা, কনস্ট্যান্স ইনারি ইউরোপের বিখ্যাত হ্রদ।

আফ্রিকার নদনদী

. নীলনদ:

আফ্রিকা তথা বিশ্বের দীর্ঘতম নদী।  দৈর্ঘ্য: ৬৬৯০ কিমি. (প্রায়)/ ৪,২৫৮ মাইল। আফ্রিকার ১১ টি দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত।  উগান্ডা, সুদান, দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া, মিশর, রুয়ান্ডা, কঙ্গো, বুরুন্ডি, তানজানিয়া, ইরিত্রিয়া, কেনিয়া। সুদানের খার্তুসে ব্লু নাইল ও হোয়াইট নাইল মিলিত হয়েছে।  এই নদী বিষুবরেখাকে দুইবার অতিক্রম করেছে। হোয়াইট নাইলের এর উৎস হল ভিক্টোরিয়া হ্রদ।  ব্লু লাইন এর উৎস হল জানা হ্রদ (ইথিওপিয়া) । এর উৎপত্তি ভিক্টোরিয়ার হৃদ এবং পতনস্থল ভূ-মধ্যসাগর ।

. কঙ্গো নদী:

 আফ্রিকা দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী । এর মোহনা ১১ কিলোমিটার । এর উৎপত্তি মালাবি ও তানজানিয়ার মধ্যবর্তী উচ্চভূমি এবং পতনস্থল আটলান্টিক মহাসাগর ।

. জাম্বেসি নদী:

এ নদীর গতিপথ সৃষ্টি হয়েছে ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। এর উৎপত্তি এঙ্গোলার মালভূমি এবং পতনস্থল ভারত মহাসাগর ।

দক্ষিণ আমেরিকার নদনদী

. আমাজন নদী:

পৃথিবীর বৃহত্তম এবং প্রশস্ততম নদী। পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী।  দক্ষিণ আমেরিকার দীর্ঘতম নদী। এর দৈর্ঘ্য ৬৪৩৭ কি.মি ।  নদীটি ৭টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যথা- ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ভেনিজুয়েলা ও গায়ানা । এ নদীর অববাহিকায় রয়েছে সেলভা বনভূমি। এই নদীর ২০টি উপনদী আছে। এই নদী দিয়ে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয় (৪.২ মিলিয়ন ঘনফুট/সেকেন্ড)।  এই নদীর উৎপত্তি গায়ানা মালভূমি এবং পতনস্থল আটলান্টিক মহাসাগর ।

. ওরিনকো নদী:

 কলম্বিয়া ও ভেনিজুয়েলার সীমানা নির্ধারণ করে।  এই নদীর উৎপত্তি গায়ানা মালভূমি এবং পতনস্থল আটলান্টিক মহাসাগর ।

উত্তর আমেরিকার নদনদী

. মিসিসিপিমিসৌরি নদী:

যুক্তরাষ্ট্র তথা উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী। দৈর্ঘ্য  ৫৯৭১ কিমি ।  উপনদী সহ পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ।

মিসৌরি মিসিসিপির প্রধান উপনদী। মিসিসিপি-মিসৌরির একত্রে দৈর্ঘ্য ৮০৯৫ কি.মি।  এটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে মিসিসিপির সাথে মিলিত হয়েছে ।  এই নদীর উৎপত্তি মিনেসোটা হ্রদ এবং পতনস্থল মেক্সিকো উপসাগর ।

. ম্যাকেঞ্জি নদী:

এই নদীর উৎপত্তি গ্রেট শ্লেভ এবং পতনস্থল উত্তর মহাসাগর ।

. সেন্টলরেন্স নদী:

এই নদীর উৎপত্তি অন্টারিও হ্রদ এবং পতনস্থল সেন্টলরেন্স উপসাগর ।

. নেলসন নদী:

এই নদীর উৎপত্তি ইউনিপেগ হ্রদ এবং পতনস্থল হাডসন উপসাগর ।

অস্ট্রেলিয়ার উল্লেখযোগ্য নদী

মারে ডার্লিং নদী:

মারে ডার্লিং অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘতম নদী। এটি অস্ট্রেলিয়ান আল্পসের কোসিয়াস্কো পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে এনকাউন্টার উপসাগরে পতিত হয়েছে। মারে ডার্লিং অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র তুষার গলা নদী। অস্ট্রেলিয়া অধিক বৃষ্টির পানি দ্বারা সৃষ্ট। ডালিং নদী মারে নদীর একটি উপনদী।

অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে কোনো নদী নেই।

অন্যান্য নদী: ফিজরয়, ভিক্টোরিয়া, রোপার, ম্যাক আর্থার, মিচেল, গিলবার্ড।

দীর্ঘতম নদী – নীলনদ ⇒ প্রশস্ততম নদী – আমাজান ⇒ আন্তর্জাতিক নদী – দানিয়ুর ⇒ ইউরোপ ও রাশিয়ায় দীর্ঘতম নদী – ভলগা

পৃথিবীর বিখ্যাত নদীর নাম

You may also like

Leave a Comment